কথোপকথন

নিলু ফেইসবুক ওপেন করে বসে ছিল। কিছু করার নেই আজ। চুপচাপ বসে ফিডগুলো দেখছিল। তখনি মিলি তাকে নক করলো।

মিলি- ‘হ্যালো’

নিলু- ‘হাই, কি করিস?’

মিলি- ‘কিছু না, হাত ব্যথা করছে! খুব’

নিলু- ‘কেন রে, হাতে কি হলে তোর আবার?’

মিলি- ‘কি হলে তা বুঝতেছি না,  শুধু ব্যথা!!’

নিলু- ‘খুব বেশি নাকি?’

মিলি- ‘না-আ.. তা না খুব বেশি না।’

নিলু- ‘ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা করিস না, আমাদের শরীরের ব্যথা সহজেই ঠিক হয়ে যায়, এইটা একটা বাচুয়া।’

মিলি- ‘সব ব্যথায় ঠিক হয়ে যায় …’

নিলু- ‘হয়তো। কিন্তু …’

মিলি- ‘কিন্তু কি? মনের ব্যথাও ঠিক হয়ে যায়’

নিলু- ‘তাই! আমি জানি হয় না, আমরা ভুলে থাকি।’

মিলি- ‘হয় হয়, ইচ্ছে করতে হয়, ইচ্ছে করলেই হয়।’

নিলু- ‘সেই ইচ্ছে করানোর উপায় কি আমাকে বলবি?’

মিলি- ‘মানে?’

নিলু- ‘দেখ, তোর হাত ব্যথা করছে ওষুধ খেলে সেরে যাবে, মনের অসুখ কিসে সারে? ক্যাটালিস্ট গুলো কি হতে পারে?’

মিলি- ‘নিজে নিজে ব্যাপারটা ভাবলেই হয়, তুই যে কারণে ব্যথা পাচ্ছিস, সেটাকেনেগেটিভ-লি ভেবে দেখ। আর যা হয়েছে তাকে পজিটিভ-লি বেশি বেশি করে দেখ, ভালদিকগুলোকে হাইলাইট কর। ’

নিলু- ‘তুই পারছিস? খালি জ্ঞান দিস।’

মিলি- ‘আল্টিমেট প্রিন্সিপাল বলে একটা কথা আছে, সেটি দিয়ে একটা ব্যপার তৈরি করলেযদি ব্যপারটা নাইও হয়েও যায়, তার রেমনেন্ট তো থাকবেই।’

নিলু- ‘দেখলি নিজের যুক্তিতে নিজেই হেরে গেলি, আমি ওই তোর রেমনেন্ট এর কথাই বলছি, ওটা মনের মধ্যে সমসময় লেগেই থাকে।’

মিলি- ‘থাকে তবে, সেটাকেও মুছে ফেলা যায়।’

নিলু- ‘সত্যি যায় কি?’

মিলি- ‘যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে।’

নিলু- ‘আমি পারি না। ’

মিলি- ‘পারি না কোন শেষ কথা না, আমার ধারণা তুই ঠিক মতো চেষ্টাই করিস না।এখনো ডুবে থাকিস ওর মাঝে। জীবনটা তো এতো ছোট না, একটা ঘটান ঘটতেই পারে।পেছনে কি ছিল সেটা নিয়ে এতো ভাবলে সামনে দেখবি কি করে?’

নিলু- ‘দোস্ত, আমি চেষ্টা করি, কিন্তু দেখ পারি না, মনের মধ্যে খালি খচ খচ করে। কিন্তু আমি সত্যিই ভুলে যেতে চাইরে।’

মিলি- ‘এই জন্যে আরও বেশি বেশি করে চেষ্টা করতে হবে, ফেইসবুকে কাওকে পছন্দ হয়নাই, অন্য কারো সাথে টাইম দে, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে সব।’

নিলু- ‘(হাসির ইমো) আমার তোরে পছন্দ। অনেক… চল আমরা পালিয়ে যাই। ’

মিলি- ‘দিবো থাপ্পড়, আমি তোর থেকে বয়সে তিন মাসের বড়ো, মনে থাকে না সে কথা , আমাকে আপু ডাকবি।’

নিলু- ‘ওরে আমার আপুরে..। আচ্ছা আপু বলেন, আপনি এতো জ্ঞান দিলেন, আপনি ভুলতে পারছেন?’

মিলি- ‘পারি নাই তাই কি হইছে, এখন তো সেসব নিয়ে ভাবি না। আমি আর এসবের মধ্যে নাই।’

নিলু- ‘মিথ্যে কথা, আমি জানি তুই এখনো ভাবিস।’

মিলি- ‘একদম যে ভাবি না তা না,  মাঝে মাঝে ওর কথা খুব মনে পরে। আমাদের খুব ভালকিছু সময় ছিলরে, সেগুলো কথা মনে পরে। তখন খুব কান্না পায়। মাঝে মাঝেকাঁদিও। কিন্তু জানি এসব অর্থহীন। ’

নিলু- ‘আমরা সবই বুঝি, কিন্তু কিছুই করতে পারি না, বলা একদম সহজ, করা অনেক কঠিন, বুঝলি?’

মিলি- ‘তা কঠিন, কিন্তু কথায় আছে না, কঠিনেরে আমরা করবো জয়, একবার জয় হয়ে গেলেই তো হালকা হয়ে যায়’

নিলু- ‘হুম, কিন্তু কি করবো বল, মনটা যে কি চায়, নিজেই জানে না, কোথা থাকে তার হদিস পাই না।’

মিলি- ‘আমার কি মনে হয় জানিস, সব কিছুই নরমাল, সব কিছু ঠিক আছে, যা হইছে তাহওয়ার ছিল, আর যা হয়নাই, তা হওয়ার ছিল না, এই সত্যটা মেনে নিলে ঝামেলা থাকেনা।’

নিলু- ‘হা হা হা, ঠিক বলছিস। আমি সবসময় সব কিছুকেই পজিটিভ-লি নেই, অপটিমিস্টিক ভাবে চলতে চেষ্টা করি।’

মিলি- ‘তুই কিন্তু খারাপ আছিস, পরীক্ষার আগের দিনও আমার সাথে কথা বলছিস অনেক্ষণ। সিরিয়াস হ, এইটা তোর অপটিমিস্টিক চলন?’

নিলু- ‘আরে… পরীক্ষা, পরীক্ষা থেকে কি তুই কম গুরুত্বপূর্ণ।’

মিলি- ‘সময় খুব খারাপ জিনিস, কেমন ছন্দময় একটা সময় ছিল, আর এখন সব কিছু মাঝেমাঝে গুবলেট হয়ে গেল। একসময় আমি ওর জন্য কতটা পাগল ছিলাম, তুই চিন্তা কর, ওযা চাইতো তাই করতাম। আর কি না আমাকে এভাবে রেখে চলে গেলো। না ওর কথা আরমনে করতে চাই না। ভাবলেই রাগ ধরে। ’

নিলু- ‘হা হা.. ’

মিলি- ‘জানিস নতুন একজন ছেলে আমাকে ইদানীং জ্বালায়। খুব পাগলামি করে’

নিলু- ‘তোরে সবাই জ্বালাবে এইটাই তো ঠিক, আমি কি কম জ্বালাই নাকি, কি বলেছিস ওকে?’

মিলি- ‘ওকে একদিন ডিরেক্টলি বললাম, দেখো, আমি যেহেতু হৃদয়ের খেলা একবার খেলেছি, এবং এই খেলায় আমি ঠকেছি, আমি আর এই খেলায় যেতে চাই না। এখন যা হবেনিতান্তই সেটেলমেন্ট। আমি ওই কাওয়ার্ডটাকে যতটা ভালবেসেছি, নতুন করে অতটাকাও বাসতে পারবো না। সত্যি কথা কি জানিস, আমি ওকে যতটা ভালবাসতাম, তারপরদ্বিতীয় যাকে ভালবেসেছি, সে হলো তুই।’

নিলু- ‘ কি বলিস, আজ নিশ্চয় সূর্য উঠেই নি। আমি নিশ্চয় স্বর্গে বাস করছি।’

মিলি-‘ন্যাকামি করবি না, তুই ভাল করেই জানিস, বুঝেও না বুঝার ভান করিস, রাগ লাগে।’

নিলু-‘তাই নাকি, রাগলে তোকে ভালই লাগে কিন্তু।’

মিলি-‘লাগবেই তো, আমি তো আর অসুন্দর না।’

নিলু-‘হুম তুমি এতো সুন্দর, দেখলেই মরে যেতে ইচ্ছে করে।’

মিলি-‘দেখ ফাজলামি হচ্ছে। ’

নিলু-‘হচ্ছেই তো। আচ্ছা বাদ দিলাম, এখন বল, তারপর কি বললি ঔই ছেলেটা কে?’

মিলি-‘তোর কথা বললাম, যে আমি তোকে ভালবাসি, এখন যদি কাও ভালবাসি সেটা হবে তোর মতো।’

নিলু-‘আমর মতো মানে?’

মিলি-‘মানেতোকে যতটুকু ভালবাসি সেইরকম। শুধুই বন্ধুত্ব। তোকে আমি অনেক ভালবাসি, কিন্তু দেখ, তোকে আমার বয়-ফ্রেন্ড ভাবতে গেলে হাসি পায়। ’

নিলু-‘হুম..’

মিলি-‘তারপর, আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমার কেমন ছেলে পছন্দ?’

নিলু-‘তুই বললি?’

মিলি-‘হুমবললাম। বললাম যে, তাকে অবশ্যই আমার থেকে কম সুন্দর হতে হবে। ফর্সা ছেলেআমার পছন্দ না, ডার্ক হতে হবে। এবং আমার এইজ-এর হতে হবে বা একটু বেশি। আমিঅনেক ডমিনেটিং। বয়স বেশি হলে ডমিনেট করা যাবে না। ’

নিলু-‘তারপর-’

মিলি-‘তারহাইট হবে আমার থেকে একটু লম্বা, খুব বেশি লম্বা ছেলে আমার পছন্দ না। আরতাকে অবশ্যই আমাকে অনেক অনেক ভালবাসতে হবে, এবং আমার সব দৌড়াত্ন সহ্য করতেহবে।’

নিলু-‘কি বললো সে?’

মিলি-‘হা হা, সে সব কিছুতেই রাজি, সমস্যা হলো সে তো ডার্ক না, তাই বলে কিনা, প্লাস্টিক সার্জারী করে কালো হয়ে যাবে। হাহা ’

নিলু-‘হুম, ভালই হবে, রাজি হয়ে যায়।’

মিলি-‘তাই, রাজি হয়ে যাবো, ইয়েস বলে দেই কি বলিস?’

নিলু-‘হুমবলতে পারিস। কিন্তু আমার চিন্তা আসলে অন্য কিছু, ইংরেজি ডিকশনারিতে একটাশব্দ আছে, ইনফাচুয়েশান, জানিস নিশ্চয়। এইটা তা্‌ই হতে পারে। জানিসতো ওয়ালেযে পেরেক তাড়াতাড়ি ঢুকে সেটা বেরিয়েও আসে তাড়াতাড়ি।’

মিলি-‘হুম, কিন্তু ও ওরকম না, অনেক ভেবে চিন্তে কথা বলে। তবে অবশ্য আমাকে বলেছে, আমার কনফিউশন থাকলে বলতে।’

নিলু-‘তুই কি বলিস, তোর কনফিউশন আছে?’

মিলি-‘আসলেকি জানিস, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ওকে মনে হয় এখনো ভালবেসে উঠতেপারি না। ওর সাথে কথা বলতে ভাল লাগে, সময় কাটাতেও। তারপরেও কেমন জানি।ভালবাসা কিন্তু অন্য জিনিস। এইটা এতো সহজে হয় না। একের সাথে অনেক কালথেকেও অনেক সময় হয়ে উঠে না। কিন্তু হাজার মাইল দুরে থেকেও ভালবাসা যায়। ’

নিলু-‘হুম, তু বরং সেটেল ম্যরিজ করে ফেলিস। সেটেলমেন্ট-ই বেটার। রিলেশন ভেঙ্গে পরারসম্ভাবনা কম থাকে।  আর ভেঙ্গে পরলেই খুব বেশি পিছুটান থাকে না।’

মিলি-‘হুম। হয়তো কিন্তু আমি কি চাই নিজেই এখনো বুঝে উঠতে পারি না। আসলে মেয়েদের মন অনেক কমপ্লেক্স।’

নিলু-‘ হা হা, এইটা তুই বললি, আমি তো জানি, এইটা মেয়েদেরকে বললে রেগে যায়।’

মিলি-‘হুম .. কিন্তু সত্যি কিন্তু তাই, তুই দেখ, তুই আমার কত ভাল বন্ধু, আমরা একসাথেকত সময় কাটিয়েছি, কিন্তু তুই কি আমাকে বুঝতে পারিস?’

নিলু-‘বুঝি হয়তো, আধো আধো। ’

মিলি-‘বুঝিস না, আমি জানি তুই বুঝবি না।’

নিলু-‘আচ্ছা আমি কে বলতো?’

মিলি-‘তুই হচ্ছিস আমার আকাশে একটা নক্ষত্র। যা দূরে থাকলেই ভাল লাগে, তোর কাছে এলে পুরে যাই।’

নিলু-‘তাই, তালে তোর কাছে আমার যাও উচিৎ না কখনো।’

মিলি-‘আসিস না প্লিজ।’

নিলু-‘আসবো না। কিন্তু তুই ভাল থাকিস। প্লিজ। তুই খারাপ থাকলে আমার কষ্ট হয়।’

মিলি-‘কেন হয় রে?’

নিলু-‘থাক না, সব প্রশ্নের উত্তর জানতে নেই।’

মিলি-‘তুইসবসময় আমাকে বলিস, ভালবাসা কি জিনিস তুই জানিস না, অথচ তোকে ঘিরে এতোভালবাসা কেন রে? যব যায়গায় স্পর্শ রেখে যাস অথচ তুই নিজেই বলিস বুঝিস না।’

নিলু-‘হুম, বেশি বুঝা ভাল না রে, কম বুঝবি তাই ভাল’

মিলি-‘ওই থাক, আজ যাই রে। থাক। অন্যদিন কথা হবে।’

নিলু-‘হুম টাটা, ভাল থাকিস।’

মিলি- ‘তুই ও থাকিস। টাটা বাই।’

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান